তোমার দেখা বা শোনা কোনো ঘটনা অবলম্বন করে একটি গল্প রচনা করো। লেখা হয়ে গেলে দলে ভাগ হয়ে নিজেদের গল্প নিয়ে আলোচনা করো।
তোমার লেখা গল্পের ভিত্তিতে নিচের প্রশ্নগুলোর জবাব দাও:
গল্প কী
বাস্তব বা কাল্পনিক বিষয় নিয়ে গদ্য ভাষায় রচিত কাহিনিকে গল্প বলে। গল্পের কাহিনির মধ্যে এক বা একাধিক ঘটনা থাকে। ঘটনা তৈরি হয় চরিত্রের বিভিন্ন রকম কাজকর্ম ও ভূমিকার মধ্য দিয়ে। গল্পের চরিত্রকে জীবন্ত করার জন্য চরিত্রের মুখে প্রায়ই সংলাপ যোগ করা হয়।
গল্পের এক বিশেষ শ্রেণিকে বলে ছোটোগল্প। ছোটোগল্পের আয়তন সাধারণত ছোটো হয়। ছোটোগল্পের কাহিনি যে কোনো ঘটনা থেকে শুরু হতে পারে, আবার হঠাৎ করে শেষ হয়ে যেতে পারে। ছোটোগল্প পড়ার পরে পাঠকের কিছুটা অতৃপ্তি তৈরি হতে পারে-মনে হতে পারে আরেকটু পড়তে পারলে ভালো লাগত।
গল্প পড়ি ১
রিজিয়া রহমান (১৯৩৯-২০১৯) বাংলাদেশের একজন গল্পকার ও ঔপন্যাসিক। তাঁর লেখা উল্লেখযোগ্য বইয়ের নাম 'ঘর ভাঙা ঘর', 'উত্তর পুরুষ', 'রক্তের অক্ষর', 'বং থেকে বাংলা' ইত্যাদি। নিচে লেখকের 'অলিখিত উপাখ্যান' উপন্যাসের খানিক অংশ দেওয়া হলো।
অলিখিত উপাখ্যান
রিজিয়া রহমান
অরণ্য কেটে বসতি স্থাপন করছে মানুষ। সুন্দরবনের দীর্ঘ গাছের ডালপালার জটাজাল সূর্যকে বর্ম-ঢাকা সেনাদলের মতো প্রতিহত করে। আলো ঢুকতে পারে না স্যাঁতসেঁতে মাটির বুকে। হিন্তাল বনে ব্যাঘ্র পরিবার নির্বিঘ্নে বিচরণ করে। বন্য শূকর, নীলগাই, বুনো মহিষেরা স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়ায়। হরিণের পালের ঘুরের শব্দ তীব্র গতিতে বাতাসের নৈঃশব্দ্য ভঙ্গ করে। জোয়ার স্ফীত আরণ্যক নদীর কুমির ডাঙায় উঠে রোদ পোহায়। গাছের ডালে শরীর জড়িয়ে মাথা দোলায় অজগর। বিচিত্র ভয়াল সুন্দরবন। সেখানে বেজে ওঠে উপনিবেশবাদী মানুষের কণ্ঠস্বর। অসংখ্য কুঠারের শব্দ বনের পশুকে সচকিত করে। জঙ্গলে ঝড় তুলে ছুটে পালায় হরিণের দল।
দুপুরের সূর্যের আলো বনের মধ্যে ঢুকতে না পারলেও তার আভায় বনভূমি আলোকিত। হাতির পিঠে দুলতে দুলতে জঙ্গল কাটার কাজ তদারক করছিল হেনরি। অনেকদিন হয়ে গেল সে লোকজন নিয়ে জঙ্গল কাটতে এসেছে। সঙ্গে এসেছে হাতি মহারাজ। তাঁর প্রিয় ঘোড়া হাওয়ার্ড। আরো এসেছে পঞ্চাশ জন মজুর। এরা সবাই মোরেলদের কয়েদখানার কয়েদি। কয়েদিরা যাতে পালিয়ে যেতে না পারে, সেইজন্য প্রত্যেকের পায়ে পরানো আছে লোহার শিকল। এছাড়া রয়েছে ঠিকাদার। আর আছে মোহন খাঁ। যাকে কয়েদিরা সাহেবের চেয়েও বেশি ভয় পায়। অবাধ্যদের শাস্তি দেবার ভয়াবহ নৃশংস সব কলাকৌশল জানা আছে তার। দিনকয়েক আগে কয়েকজন কয়েদি জঙ্গল কাটা ফেলে মধুর চাক ভাঙতে গিয়েছিল, কঠিন শাস্তি দিয়েছিল মোহন খাঁ। মৌচাকের নিচে আগুনের ধোঁয়া দিয়ে উড়িয়ে দিয়েছিল মৌমাছিদের। আর সেই ক্রুদ্ধ মৌমাছির ঝাঁকে দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল অপরাধীদের। মৌমাছির কামড়ে পরদিন তাদের চোখ-মুখ-শরীর ফুলে এমন বীভৎস চেহারা হয়েছিল যে, হেনরিই তাদের চিনতে পারেনি। দুদিন আগে এক কয়েদি জঙ্গল কাটা ফেলে বসেছিল। ঠিকাদারের চাবুক পড়েছিল তার ওপরে। ঠিকাদার চাবুক মারতে মারতে চিৎকার করে গালাগাল দিচ্ছিল-তোদের কি এখানে বসে হাওয়া খাবার জন্য আনা হয়েছে। নবাবের মতো হাত-পা ছড়িয়ে বসে আছিস!
কয়েদিটা ক্ষীণ কণ্ঠে বলেছিল-বড়ো পানির পিপাসা। সারাটা দিনে মাত্র তিনবার খাবার পানি পাই। তেষ্টায় যে বুকটা শুকিয়ে থাকে। কুড়োল চালাতে পারি না।
ঠিকাদার খেঁকিয়ে উঠেছে-ওঃ কী আমার নবাবপুত্তুর রে। ঘন্টায় ঘণ্টায় পানির গেলাস চাই। জানিস, মিঠা পানি কত দূর থেকে আনতে হয়?
লোকটাকে পানি দেওয়া হয়নি। দুদিন পর পর লোক পাঠিয়ে দূরের গ্রামের দিঘি থেকে ভারায় করে খাবার পানি আনতে হয়। সুতরাং বেহিসেবি খরচ করে পানি শেষ করলে এই লবনাক্ত এলাকায় খাবার পানি পাওয়া যাবে কোথায়! লোকটাকে লাথি মেরে দাঁড় করিয়ে দিল ঠিকাদার-ওঠ, গাছ কাট।
কিছুটা দূরে তাঁবুতে বসে হেনরি বন্দুক পরিষ্কার করছিল। ডেকে জিজ্ঞসা করল-এই ঠিকাদার! কী হয়েছে? গোলমাল কেন ওখানে?
দোর্দন্ড প্রতাপের ঠিকাদার সঙ্গে সঙ্গে একেবারে আভূমি নত হয়ে গেল-দেখুন হুজুর! এই ব্যাটা কাজে ফাঁকি দিয়ে বসে বসে আরাম করছে। ঘড়ি ঘড়ি আবার পানি চাই নবাবজাদার।
হেনরি বন্দুক থেকে চোখ না তুলে বলল-এত মিঠা পানি দেয়া যাবে না। টাইনের আগে কেউ পানি পাবে না। তখনি চাকর বড়ো গ্লাসে পানি এনে ধরল হেনরির সামনে। হেমন্ত শেষ হয়ে গেছে। তবু এই বনের মধ্যে ভ্যাপসা গরম! বন্দুক সাফ করতে করতে হেনরি ঘেমে উঠেছিল। পানির গ্লাসটা মুখের কাছে ধরতেই দেখল, দূর থেকে তৃষ্ণার্ত কয়েদিটা কেমন লোলুপ জ্বলজ্বলে দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে হেনরির পানির গ্লাসের দিকে। মাথাচাড়া দিল বিবেক। আর বোধ হয় সেই বিবেকের নির্দেশকে অবদমিত করবার জন্য ভীষণ রাগ উঠল হেনরির শরীর বেয়ে। রাগবিকৃত কন্ঠে চিৎকার করে উঠল হেনরি মোরেল-ঠিকাদার!
ঠিকাদার ছুটে এলো-হজুর।
হেনরি এক চুমুকে পানির গ্লাস শূন্য করে বলল- ওকে ধরে নদীর পানি খাইয়ে দাও।
ঠিকাদার শিকল পরা লোকটাকে ঠেলতে ঠেলতে নিয়ে গেল খালের পাড়ে-খা। এই খালের পানি খেয়ে তোর বুক ঠান্ডা কর।
লোকটাকে চেপে ধরে সুন্দরবনের ঘোলা লবণাক্ত পানির কাছে নিয়ে গেল ঠিকাদার। কিছুটা ভয়ে এবং প্রচণ্ড তুফায় সেই কাদাছোলা লবণ বিশ্বাদ পানি আঁজলা ভরে খেল লোকটা।
চমৎকার আত্মপ্রসাদে তাঁবুর দড়ির বোনা চেয়ারে বসে হাসল হেনরি মোরেল। এইসব ঠিকাদার, মোহন খাঁ, দুর্গাচরণ আর মোরেলদের পোষা লাঠিয়াল পাইক বরকন্দাজদের মতো আজ্ঞাবহ দাসবৎ লোকগুলো আছে বলেই স্বল্পসংখ্যক শ্বেতাঙ্গ, এই বিরাট দেশকে পদানত করে রাখতে পেরেছে।
সারা বন কুড়ালের শব্দে মুখর। হিন্ডাল হোগলা আর উলুখড়ের বন নিঃশেষ হচ্ছে। বড়ো বড়ো গাছ কুড়ালের ক্রমাগত আঘাতে প্রাচীন ডাইনোসরের মতো আর্তনাদ করে লুটিয়ে পড়ছে। এগিয়ে চলেছে মানুষ। এগিয়ে চলেছে সভ্যতা। এখানে মোরেলদের আবাদ চলবে। ফসল ফলবে। গড়ে উঠবে মনুষ্য বসতি। মহারাজ গলার ঘণ্টার শব্দ ছড়িয়ে এগিয়ে চলেছে। আবাদি এলাকার কাজ পরিদর্শনে বেরিয়েছে সাহেব হেনরি। আগে-পিছে ঘোড়ায় চলছে মোহন খাঁ আর কালু বাওয়ালি। কালু বাওয়ালি নামকরা শিকারি। একবার বাঘের সঙ্গে খালি হাতে লড়াই করছিল সে। দুপাশে কয়েদিরা একজন ঠিকাদারের তত্ত্বাবধানে গাছ কাটছে। কুড়ালের শব্দের সঙ্গে সঙ্গে ঝন ঝন করে শব্দ তুলছে তাদের পায়ের শিকল। হেনরি হাতির ওপর বসে বলল-এই: আজকের মধ্যে এই এলাকাটা সাফ করতে হবে। বুঝলি?
বশংবদ ঠিকাদার মাথা কাত করে বলল-আজে হজুর।
তারপর কাঠ কাটা দলের ওপর চাবুক ঘোরাল-হাত চালা। হাত চালা সব।
শৃঙ্খলিত মানুষগুলোর হাতের কুঠার আঘাত করছে বনভূমির নিস্তব্ধতায়। ফটকের সামনে এলো হেনরি। জঙ্গলে এসে প্রথমেই এই বাসস্থান তৈরি করিয়েছে সে। অনেকটা জায়গা পরিষ্কার করা হয়েছে। বড়ো বড়ো সুন্দরী গাছ দিয়ে বিশ ফুটের মতো উঁচু বেড়ায় ঘিরে ফেলা হয়েছে চারদিক। কোনো বন্য জীব-জন্তু সুন্দরী গাছের বেড়ার দেয়াল টপকে যাতে ভেতরে ঢুকতে পারে না। এর মধ্যেই গোলপাতার ছাউনি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে কয়েদিদের থাকবার চালা। ঠিকাদারদের ঘর। মহারাজ আর হাওয়ার্ডের আস্তাবল। ফটকের ভেতর ঢুকে মহারাজ হাঁটু মুড়ে বসল। পিঠের ওপর থেকে নেমে পড়ল হেনরি। কাঠের তৈরি বিরাট ফটক সন্ধ্যার আগেই বন্ধ করে দেয়া হয়। লম্বা ভারী দুটো গাছ আড়াআড়ি করে হুড়কোর মতো বেঁধে দেয়া হয় ভেতর থেকে। সুন্দরবনের পাজি জানোয়ার বন্য মহিষের দল অবশ্য ভয়ংকর শক্তিশালী। একজোট হয়ে ধাক্কা মারতে শুরু করলে ফটক ভেঙে পড়তে পারে। তাই কয়েদিরা পালা করে সারা রাত বসে ফটকের কাছে আগুন জ্বালিয়ে পাহারা দেয়। বন্য জন্তুর সাড়া পেলে ক্যানেস্তারা পিটিয়ে চিৎকার করে। তাঁবুতে এসে ঢুকতেই একজন ঠিকাদার ছুটে এলো-সাহেব হজুরা এদিকে যে মহা বিপদ হয়েছে।
হেনরি ফিরে দাঁড়াল-কী হয়েছে?
ঠিকাদার চোখে-মুখে আতঙ্ক নিয়ে বলল-হুজুর, পশ্চিম দিকের বনে কয়েদিরা কাজ করছিল। ঝোঁপের ভেতর থেকে একটা দাঁতাল বুনো শুয়োর বেরিয়ে একজন কয়েদির উরু চিরে ফেলেছে। সবাই হৈ হৈ করে ওঠায় শুয়োরটা পালিয়েছে। এখন কয়েদিরা কাজ করতে ভয় পাচ্ছে। ওদের পায়ে শিকল লাগানো, ছুটতে পারে না। গাছে উঠতে পারে না। খুব ভয় পাচ্ছে ওরা। আর যে লোকটার উরু চিরে গেছে সে তো অজ্ঞানের মতো পড়ে আছে। ভীষণ রক্ত ঝরছে।
হেনরি চিন্তিত হলো। ঘটনাটা নিঃসন্দেহে চিন্তার বিষয়। দু-চারজন ঠিকাদারের হাতে বন্দুক দিয়েছে বটে হেনরি, তবে সেটাও কতটা নিশ্চিন্ত হবার মতো কে জানে। বন্দুক যতটা না বন্য জন্তু মারবার জন্য তার চেয়ে বেশি কয়েদিদের ভয় দেখাবার জন্য। বাঘ, বুনো মহিষ, বন্য শূকর আশেপাশেই রয়েছে। জঙ্গলে আসবার কয়েক দিনের মধ্যেই তো গোটা পাঁচ-সাত কয়েদি শেষ হয়েছে। দুজনকে সাপে খেয়েছে, একজনকে খালের পাড় থেকে কুমিরে টেনে নিয়েছে। বুনো মহিষ শিঙে বাঁধিয়ে নিয়ে গেল একজনকে। আর দুজনকে হিন্তাল বন কাটবার সময়ে বাঘে খরেছে। কিন্তু কী করা যায়। এমনিতেই মজুরের সংখ্যা কমে যাচ্ছে, তার ওপর পায়ের শিকল খুলে দিলে তো সব কটাই পালাবে। মজুরদের কাটা বড়ো বড়ো গাছ পেছনে বেঁধে টেনে আনছে মহারাজ। সেদিকে তাকিয়ে হেনরি গম্ভীর হয়ে বলল-আজ ঐ সেকশানের কাজ বন্ধ থাক। যার পা কেটেছে, সে লোকটা কোথায়?
ঠিকাদার বলল-ওখানেই পড়ে আছে। হেনরি খুব বিরক্ত হলো। সে এসেছে অ্যাডভেঞ্চার আর স্পোর্টসের নেশায়। তার মধ্যে এসব কী ঝঞ্জাট। হেনরি মোহন খাঁকে আর কালু বাওয়ালিকে পাঠিয়ে দিল লোকটাকে চালায় নিয়ে আসবার জন্য। ওরা চলে যেতেই দড়ির চেয়ারটায় বসে পড়ল। চাকরকে হুকুম করল খানা লাগাতে। দড়ির চেয়ারের সামনে দুটো তরুণ বিছিয়ে খানার টেবিল লাগাল চাকর। দুজন চাকর হেনরির আদরের ঘোড়া হাওয়ার্ডের দলাইমলাই করছে। মহারাজকে একটা আন্ত কলাগাছ দেয়া হয়েছে খেতে। এদিকে কলাগাছ পাওয়া যায় না। বনের ধারে বাওয়ালিদের যে গ্রাম আছে। সেটাও এখান থেকে দুই ক্রোশ। হেনরির লোকেরা সেখান থেকে মজুরদের রেশন, পানীয় জল, ঘোড়ার দানা আর কলাগাছ সংগ্রহ করে আনে। দুপুরের শেষ প্রহরেই বনের চারধারে ছায়া ছায়া অন্ধকার নেমেছে। মজুরদের চালাঘরের সামনে মাটির চুলো করে বড়ো খাঁড়িতে চাল-ডাল মিলিয়ে মজুরদের খিচুড়ি রান্না হচ্ছে। একবারই রান্না করা হয়। রাতে খাবার পর বাসি খিচুড়ি সকালে খেয়ে সবাই কাজে যায়। লাভের পর পা ছাড়িয়ে শরীর এলিয়ে দিল হেনরি।
তাঁবুর পরদার সামনে মোহন খাঁ এসে দাঁড়াল। সাহেব ঘুমিয়েছেন মনে করে সে চলে যাচ্ছিল। হেনরি চোখ খুলে ডাকল কী খবর মোহন খাঁ?
মোহন ভেতরে এলো-সাহেব। লোকটা বোধ হয় বাঁচবে না। পায়ের দুধারের মাংস বেরিয়ে পড়েছে, রক্তও থামছে না। কী করা যায় এখন!
হেনরি বলল-কী করা যাবে আর। মরে গেলে ফেলে দিয়ে আসতে হবে।
মোহন বলল-কালু অবশ্য কীসব লতা-পাতার রস লাগিয়ে দিয়েছে। ওদিকে আবার আর একটাকেও আজ বাঘে ধরে নিয়ে গেছে। বোধ হয় আগের বাঘটাই মানুষের রক্তের স্বাদ পেয়েছে, এখন রোজই মানুষ ধরবে।
সন্ধ্যা নেমে এসেছে। দলে দলে মজুরেরা পায়ের শিকলের শব্দ তুলে ফটক দিয়ে ঢুকছে। কুড়াল হাতে ধরা কালো লোকগুলোর মুখে ভীষণ আতঙ্কের ছাপ।
হেনরি বলল- তাহলে কী করা যায় বলো মোহন খাঁ। যতটুকু জঙ্গল কাটবার প্ল্যান নিয়ে এসেছি আমরা, তার চার আনাও তো কাটা হয়নি। এখন কাজ বন্ধ করে রাখা তো ঠিক হবে না।
মোহন প্রবল আপত্তিতে মাথা ঝাঁকাল-না না কাজ বন্ধ করা যাবে না। দরকার হলে ফিরে গিয়ে আরো কিছু লোক ধরে আনব আমরা।
বাইরের ফটক বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। জঙ্গল থেকে জীবজন্তুর বিচিত্র সব ডাক শোনা যাচ্ছে। হঠাৎ মেঘ গর্জনের মতো শব্দ করে বাঘ ডাকল। হেনরি আর মোহন খাঁ দুজনেই সচকিত হয়ে দৃষ্টি বিনিময় করল। মোহন বলল-বাঘটা বোধ হয় শিকার নিয়ে ধারে-কাছেই আছে।
হেনরি হঠাৎ সোজা হয়ে দাঁড়াল-বাঘটাকে শিকার করতে হবে। ম্যান ইটার যখন হয়ে গেছে, তখন ঘন ঘন হানা দেবে। কাল সকালে চলো, কোনো চিহ্ন দেখতে পাই কিনা। তাহলে মাচা বাঁধব।
অলিখিত উপাখ্যান' গল্পটির ভিত্তিতে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও। তোমার উত্তর সহপাঠীদের উত্তরের সাথে মেলাও এবং প্রয়োজনে সংশোধন করো।
ত্রুটির বিষয় কী? | |
গল্পের কাছিনি কী নিয়ে? | |
গল্পে কী কী ঘটনা ঘটেছে? | |
গল্পে কোন কোন চরিত্র আছে? | |
চরিত্রের মুখের সংলাপগুলো কোন ভাষারীতিতে লেখা? |
১০০-১৫০ শব্দের মধ্যে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর লেখো। এরপর সহপাঠীর সঙ্গে আলোচনা করো এবং প্রয়োজনে তোমার উত্তর সংশোধন করো।
১। 'অলিখিত উপাখ্যান' গল্পটি কোন সময়ের ও কোন প্রেক্ষাপটে লেখা?
__________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________
২। গল্পে উপনিবেশবাদী কারা? তারা কীভাবে স্থানীয় মানুষের উপর অত্যাচার করেছে?
__________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________
৩। 'বড়ো বড়ো গাছ কুড়ালের ক্রমাগত আঘাতে প্রাচীন ডাইনোসরের মতো আর্তনাদ করে লুটিয়ে পড়ছে।'- আলোচনা করো।
__________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________
৪। প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য কী করা উচিত এবং কী করা উচিত নয়?
__________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________
সেলিনা হোসেন (জন্ম ১৯৪৭) বাংলাদেশের একজন গুরুত্বপূর্ণ কথাসাহিত্যিক। তাঁর উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে আছে 'পোকামাকড়ের ঘরবসতি', 'যাপিত জীবন', 'যুদ্ধ', 'গায়ত্রী সন্ধ্যা', 'মানুষটি' ইত্যাদি। নিচের গল্পটি লেখকের 'আকাশপরি' উপন্যাসের অংশবিশেষ।
আকাশপরি
সেলিনা হোসেন
মেয়েটি মায়ের কপালে হাত রেখে আলতো স্বরে ডাকে, ওঠো। আর কত ঘুমুবে।
মা ভীষন আদরের অনুভবে পাশ ফিরে শোয়। মেয়েটি আবার ডাকে। বলে, ওঠো ভোর হয়েছে। ভোরের আলো দেখবে না? তুমি না ভোরের আলো ভীষণ ভালোবাসো।
-হ্যাঁ, ভীষন ভালোবাসি। আমি ভোরের আলো দেখব। রোজ ভোরেই তো দেখতে চাই। কিন্তু হয়ে ওঠে না।
-ছাদে এসো। আমি যাচ্ছি।
মা ধড়মড়িয়ে উঠে বসে। কিন্তু পাশে কেউ নেই। কে ডাকল তাকে? মা চোখ মুছে চারদিকে তাকায়। কেউ কোথাও নেই। সঙ্গে সঙ্গে বুঝে যায়, কে তাকে ডেকেছে। মা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ছাদে উঠে আসে।
-বাহু, কী অপূর্ব আলো। রিখ, নরম।
মা নিজেকে বলে। মেয়েটি খিলখিল করে হেসে ওঠে।
মা চারদিকে তাকায়। বলে, আমি তো ঐ আলোর ভেতর তোমাকে দেখতে পাই। তুমি কি আছ?
মেয়েটি কথা বলে না। স্নিগ্ধ বাতাস মাকে ছুঁয়ে যায়। মা দুহাতে মুখ ঢাকে। তার চোখ দিয়ে জল গড়ায়।
-কেঁদো না। মেয়েটির কণ্ঠ।
-এভাবে ছুঁয়ে গেলে তো হবে না। আমি তো তোমাকে দেখতে চাই।
-আমি এভাবেই তোমার কাছে থাকি। আমি তো জানি তুমি টের পাও কখন আমি তোমার পাশে এসে দাঁড়াই।
-পাই, পাই।
মা চোখ মুছতে মুছতে সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসে। মাঝে মাঝে চোখের ওপর রেগে যায় সে, এত জল কোখা থেকে আসে এই চোখে। জল ফুরোয় না কেন? এসব ভাবলে জল আরো দ্বিগুণ বেগে বের হয়। মেয়েটা তখন কড়া স্বরে ধমক দিয়ে বলে, তুমি এত ফ্যাঁচফ্যাঁচ করো কেন বলো তো। মায়ের কণ্ঠে উত্তর নেই। মা উত্তর দিতে জানে না। মা কান্নার বেগ সামলানোর জন্য রেলিং ধরে ঝুঁকে থাকে।
তখন বাড়ির সবাই ঘুম থেকে জেগে উঠেছে। যে যার কাজে যাবার জন্য রেডি হবে। মায়েরও এখন অনেক কাজ। সবাইকে নাশতা দিতে হবে। নিজের অফিসে যেতে হবে। যাবার পথে শিশু হাসপাতালে যেতে হবে তপুকে দেখতে। ওর ডেঙ্গু জ্বর হয়েছে। এটা নিয়ে মা ভীষণ চিন্তায় আছে। যদিও ডাক্তার বলেছে, তপু বিপদমুক্ত, কিন্তু মায়ের ভাবনা কাটে না।
মা চোখের জল মুছে রান্নাঘরে যায়। চটপট অনেকগুলো স্যান্ডউইচ বানায়। ঘড়ি দেখে। স্যান্ডউইচের প্লেটটা নিয়ে ডাইনিং টেবিলে যাবার সময়ে থমকে দাঁড়ায় মা। বুক ভেঙে যায়। টেবিলের একটি চেয়ারে মেয়েটি আর এসে বসে না। ঐ একটি চেয়ার ওর প্রিয় জায়গা ছিল। ওই চেয়ারটিতে না বসলে নাকি ওর ভাত খাওয়া হতো না। এখন কোন চেয়ারে বসে ও ভাত খায়? এই ভাবনার মাকে মা স্যান্ডউইচের প্লেট হাতে নিয়ে হাবার মতো দাঁড়িয়ে থাকে। মনে হয় যেন চেয়ারটার একটি পা নেই।
যেন পা-হীন চেয়ারটাকে কেউ সুইরজারল্যান্ডের জেনেভা শহরের জাতিসংঘ দপ্তরের ভবনগুলোর সামনে রেখে দিয়েছে। মায়ের মনে হয়, সে তার মেয়েটিকে নিয়ে সেই ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। দুজনে মিলে হাঁ করে বিশাল চেয়ারটাকে দেখছে।
মায়ের কানে মেয়েটির কণ্ঠ বাজে, কী ভাবছ না?
-তুমি আর আমি সুইজারল্যান্ডে গিয়েছিলাম, সে কথা মনে পড়ছে
মেয়েটি খিলখিল করে হেসে ওঠে। মায়ের কানে সে হাসি বড়ো মধুর লাগে। মা বুঝতেই পারে না যে অন্য ঘরে এষা ওর বাবার সঙ্গে মজা করছে আর হেসে গড়িয়ে পড়ছে। মায়ের মনে হয় চেয়ারটা দেখতে দেখতে সে শক্ত করে মেয়েটির হাত চেপে ধরেছে। মেয়েটি একদিন ওকে বলেছিল, জানো মা আমার শরীরের প্রতিটি অঙ্গ ভীষণ মূল্যবান। আমার একটি পা না থাকলে আমি আর প্লেন চালাতে পারব না।
মেয়েটি আবার বলে, তুমি ঐ চেয়ারটার দিকে তাকিয়ে আছো কেন আমি জানি।
-জানবেই তো। তুমি তো আমাকে বলেছ ভূমিমাইন নিষিদ্ধ করার আন্দোলন শুরু হয়েছে। কারণ যুদ্ধ শেষ হয়ে যাবার পরও পেতে রাখা তুমিমাইন বিস্ফোরণে অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে কিংবা পঙ্গু হচ্ছে। এই বিশাল চেয়ারটি ভূমিমাইন পেতে রাখার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের প্রতীক। শুধু তাই নয়, এটা রাখা হয়েছে তাদের সারণে যারা ভূমিমাইন বিস্ফোরণে মরে গেছে কিংবা পঙ্গু হয়েছে। কারা যেন স্লোগান দিচ্ছে 'মাইনমুক্ত পৃথিবীর জন্য লড়ে যেতে চাই।'
মায়ের মনে হয় সে ওই স্লোগানটি শুনতে পাচ্ছে। তার পাশে দাঁড়িয়ে মেয়েটিও স্লোগান দিচ্ছে। অনেকক্ষণ চেঁচিয়ে মেয়েটি বলে, তুমি স্লোগানটি দিচ্ছ না কেন মা?
-তোমার কণ্ঠ শুনতে আমার ভালো লাগছে। স্লোগানটি দেওয়ার সময়ে তুমি যে অন্যরকম হয়ে যাও তা দেখতে আমার ভালো লাগছে। আমাকে দেখতে দাও।
-ঠিক আছে দেখো, কিন্তু আমি যখন এই পৃথিবীতে থাকব না, তখন কিন্তু তুমি আমার হয়ে স্লোগানটি দিও।
মা আঁতকে উঠে বলে, না, এমন কথা বলবে না। তুমি থাকবে না কেন?
-আমি তো আকাশপরি হয়ে যাবো মা। তখন দূর থেকে দেখব পৃথিবী নাইনমুক্ত হয়েছে। ঘটে যাওয়া যুদ্ধের পরেও পেতে রাখা মাইনের কারণে কেউ হারাচ্ছে পা, কিংবা জীবন।
-এসব কী বলছ তুমি? তখন আমি তোমাকে ছুঁয়ে দেখতে পারব তো?
-ছোটোবেলা থেকে কত না পরির গল্প শুনেছো তাকে কি ছুঁয়ে দেখতে পেরেছ?
-ওহ্মাগো, আমি চাই না এমন দিন আমার জীবনে আসুক। আমি তোমাকে বুকের মধ্যে ধরে রাখতে চাই।
মায়ের শরীর থরথর করে কাঁপে। হাত থেকে পড়ে যায় স্যান্ডউইচের থালা।
ছুটে আসে এখা আর ওর বাবা।
-কী হয়েছে তোমার?
মা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। কথা বলে না। তারপর চিৎকার করে কাঁদতে থাকে। ওরা মাকে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দেয়।
মা বিকেলে তপুকে দেখতে শিশু হাসপাতালে যায়। তপু মায়ের বান্ধবীর ছেলে। গিয়ে দেখে তপুর বিছানা শূন্য। ওখানে অন্য রোগী। মা ভাবে, তপু বোধহয় ভালো হয়ে বাড়ি চলে গেছে। না ওয়ার্ডের চারদিকে তাকায়। দিনের বেলায়ও ডেঙ্গু জ্বরে অসুস্থ বাচ্চাদের মশারির ভেতরে রাখা হয়েছে। কেমন অদ্ভুত দেখাচ্ছে হাসপাতালের
ওয়ার্ড। মাকে ওই বেডের কাছে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে পাশের বেডের মহিলা জিজ্ঞেস করে, আপনি কাউকে খুঁজছেন?
-হ্যাঁ, এই বেডে তপু নামে একটা বাচ্চা ছিল।
-ঘণ্টা দুয়েক আগে ও মারা গেছে।
-মারা গেছে?
মায়ের মাথা ঘুরে উঠলে কিছু একটা ধরার জন্যে হাত বাড়ায়। তখন সেই মহিলা তাড়াতাড়ি মাকে ধরে ফেলে।
টুল টেনে বসতে দেয়। বলে, কিছুক্ষণ আগে সবাই লাশ নিয়ে বাড়ি গেছে।
মা কথা বলতে পারে না। মহিলার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। মহিলা জিজ্ঞেস করে, রোগী আপনার কী হয়?
-বান্ধবীর ছেলে।
-এখন আপনার বান্ধবীর ব্যড়িতে যাবেন?
-যাব। যেতেই তো হবে। তারপর দ্রুত মাথা নেড়ে বলে, না, না, যাব না।
-কেন যাবেন না?
-এখন কেউ মারা গেলে সেখানে আর আমি যেতে পারি না।
-কেন?
-আমার মেয়েটি যে আকাশপরি হয়েছে।
-মানে? মহিলা অবাক হয়ে তাকায়। মা মহিলাকে ধন্যবাদ দিয়ে উঠে চলে আসে। মহিলার কথার জবাব দেয় না। গাড়িতে উঠে ড্রাইভারকে বলে, ফজলু তুমি আমাকে আমার মেয়ের কাছে নিয়ে যাও। ফজলু বুঝে যায় কোথায় যেতে হবে। ও মিরপুর শহিদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে আসে।
মা ওর মাথার দিকে পুঁতে রাখা বাঁশের উপর হাত রেখে বলে, তুমি ভালো আছ তো? মেয়েটির কণ্ঠ, হ্যাঁ, ভালো
আছি। নানির সঙ্গে থাকি। তুমি তো জানো নানি ভীষণ যত্ন করে। যেখানে থাকি দারুণ সুন্দর জায়গা। চারদিক
ঝকঝকে, তকতকে। গাছে গাছে রং-বেরঙের ফুল ফুটে থাকে। ভোরবেলা পাখিগুলো কী সুন্দর গান যে গায়!
গান শুনে আমার ঘুম ভাঙে। আচ্ছা মা, আমাদের ঢাকা শহরটা এমন সুন্দর হয় না কেন?
মা চোখে আঁচল চাপা দেয়।
মেয়েটি আবার বলে, তোমরা আর কত দিন এই শহরের এইসব জঞ্জালের মধ্যে থাকবে?
মা মৃদু স্বরে বলে, যতদিন বেঁচে থাকতে হবে ততদিন।
মায়ের নাকে কামিনী ফুলের গন্ধ এসে লাগে। বাতাসের এক ঝাপটায় এক ঝলক গন্ধ। মা চারদিকে তাকায়।
শত শত কবর। সব কবরের গায়ে গজিয়ে উঠেছে হরেক রকম ফুলের গাছ। কত যে তার গন্ধ। মা বুক ভরে শ্বাস
টানে। মায়ের মনে হয়, স্বস্তি পাওয়ার জন্য এটাই এখন উপযুক্ত জায়গা। এখানে কালো ধোঁয়া নেই, বাতাসে সিসার গন্ধ নেই। এখানে এলে চমৎকার সময় কাটে। মাকে দেখলে ছুটে আসে শিশুরা। মা ওদের সঙ্গে কথা বলে। কেউ বলে, আগামী ঈদে আমাকে একটি জামা দেবেন কিন্তু। মা বলে, দেবো। ওরা খুশিতে উজ্জ্বল মুখে তাকায়। বলে, সবাইকে দেবেন?
-হ্যাঁ, সবাইকে।
ওরা মায়ের পিছে পিছে আসে। মা ওদের পয়সা দেয়। ওরা বলে, আমরা আপনার মেয়েকে রোজ ফুল দিয়ে যাব।
মা আনমনে বলে, ও ফুল ভীষণ ভালোবাসে। তোরা জানিস আমি বিদেশে গেলে ওর জন্য সুগন্ধি মোম কিনে আনি। ও খুব মোম ভালোবাসত।
ছেলেমেয়েরা মায়ের দিকে তাকিয়ে থাকে। ওরা মায়ের মেয়েটিকে চেনে না, তবু একজন বলে, আমি তাকে স্বপ্ন দেখেছি।
-সত্যি? কী দেখেছিস? কেমন দেখেছিস?
-পরি স্বপ্ন দেখেছি। কী সুন্দর পাখা মেলে আকাশে উড়ে বেড়ায়।
মায়ের দম বন্ধ হয়ে আসে। ওদের মাথায় হাত রাখে। ভাবে, ওরাই তাকে সবচেয়ে বেশি বুঝতে পারে। মায়ের চোখে পানি দেখে ওরাও চোখ মোছে। শিশুদের আন্তরিকতায় মা অভিভূত হয়।
আকাশপরি' গল্পটির ভিত্তিতে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও। তোমার উত্তর সহপাঠীদের উত্তরের সাথে মেলাও এবং প্রয়োজনে সংশোধন করো।
গল্পটির বিষয় কী? | |
গল্পের কাহিনি কী নিয়ে? | |
গল্পে কী কী ঘটনা ঘটেছে? | |
গল্পে কোন কোন চরিত্র আছে? | |
চরিত্রের মুখের সংলাপগুলো কোন ভাষারীতিতে লেখা? |
১০০-১৫০ শব্দের মধ্যে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর লেখো। এরপর সহপাঠীর সঙ্গে আলোচনা করো এবং প্রয়োজনে তোমার উত্তর সংশোধন করো।
১। 'আকাশপরি' গল্পের মেয়েটির মৃত্যু কীভাবে হয়েছিল বলে তোমার ধারণা?
________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________
২। গল্পের মা চরিত্রটির মনের অবস্থা তুলে ধরো।
________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________
৩। আমাদের ঢাকা শহরটা সুন্দর হয় না কেন?'-একই রকম প্রশ্ন তোমার এলাকা সম্পর্কে করা হলে তার জবাব কী হতে পারে সংক্ষেপে লেখো।
________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________
৪। ডেঙ্গু প্রতিরোধে আমাদের করণীয় কী আলোচনা করো।
________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________
বনফুল (১৮৯৯-১৯৭৯) বাংলা সাহিত্যের একজন বিখ্যাত লেখক। তাঁর প্রকৃত নাম বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়। তাঁর লেখা বইয়ের মধ্যে আছে 'তৃণষন্ড', 'কিছুক্ষণ', 'দ্বৈরথ', 'নির্মোক', 'বিন্দুবিসর্গ' ইত্যাদি। নিচের গল্পটি বনফুলের 'অদৃশ্যলোক' গল্পগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে।
নিমগাছ
বনফুল
কেউ ছালটা ছাড়িয়ে নিয়ে সিদ্ধ করছে।
পাতাগুলো ছিঁড়ে শিলে পিষছে কেউ।
কেউ বা ভাজছে পরম তেলে।
খোস দাদ হাজা চুলকানিতে লাগাবে।
চর্মরোগের অব্যর্থ মহৌষধ।
কচি পাতাগুলো খায়ও অনেকে।
এমনি কাঁচাই... কিংবা ভেজে বেগুন সহযোগে।
যকৃতের পক্ষে ভারি উপকার।
কচি ডালগুলো ভেঙে চিবোয় কত লোক দাঁত ভালো থাকে। কবিরাজরা প্রশংসায় পঞ্চমুখ। বাড়ির পাশে গজালে বিজ্ঞরা খুশি হন।
বলেন- ‘নিমের হাওয়া ভালো, থাক, কেটো না।’
কাটে না, কিন্তু যন্ত্রও করে না। আবর্জনা জমে এসে চারিদিকে। শান দিয়ে বাঁধিয়েও দেয় কেউসে আর-এক আবর্জনা। হঠাৎ একদিন একটা নতুন ধরনের লোক এলো। মুগ্ধ দৃষ্টিতে চেয়ে রইল নিমগাছের দিকে। ছাল তুলল না, পাতা ছিঁড়ল না, ডাল ভাঙল না। মুগ্ধ দৃষ্টিতে চেয়ে রইল শুধু।
বলে উঠল ‘বাঃ কী সুন্দর পাতাগুলি... কী রূপ। থোকা থোকা ফুলেরই বা কী বাহার... এক ঝাঁক নক্ষত্র নেমে এসেছে যেন নীল আকাশ থেকে সবুজ সায়রে। বাহ্’
খানিকক্ষণ চেয়ে থেকে চলে গেল।
কবিরাজ নয়, কবি।
নিমগাছটার ইচ্ছে করতে লাগল লোকটার সঙ্গে চলে যায়।
কিন্তু পারল না।
মাটির ভিতরে শিকড় অনেক দূরে চলে গেছে। বাড়ির পিছনে আবর্জনার স্তূপের মধ্যেই দাঁড়িয়ে রইল সে।
ওদের বাড়ির গৃহকর্ম-নিপুণা
লক্ষ্মী বউটার ঠিক এই দশা।
নিমগাছ' গল্পটির ভিত্তিতে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও। তোমার উত্তর সহপাঠীদের উত্তরের সাথে মেলাও এবং প্রয়োজনে সংশোধন করো।
গল্পটির বিষয় কী? | |
গল্পের কাহিনি কী নিয়ে? | |
গল্পে কী কী ঘটনা ঘটেছে? | |
গল্পে কোন কোন চরিত্র আছে? | |
চরিত্রের মুখের সংলাপগুলো কোন ভাষারীতিতে লেখা? |
১০০-১৫০ শব্দের মধ্যে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর লেখো। এরপর সহপাঠীর সঙ্গে আলোচনা করো এবং প্রয়োজনে তোমার উত্তর সংশোধন করো।
১। 'নিমগাছ' গল্প থেকে নিমগাছের উপকারিতা সম্পর্কে যা জানলে তা লেখো।
____________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________
২। 'ওদের বাড়ির গৃহকর্ম-নিপুণা লক্ষ্মী বউটার ঠিক এই দশা।'-বিশ্লেষণ করো।
____________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________
৩। নিঃস্বার্থ উপকার ও স্বার্থপরতা এই গল্পে কীভাবে প্রতিফলিত হয়েছে, লেখো।
____________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________
৪। নিমগাছের মতো উপকারী তিনটি গাছের নাম লেখো এবং সেগুলোর গুনাগুণ লেখো।
____________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________
'গল্প পড়ি' অংশে তিনটি গল্প পড়েছ। এগুলো পড়ার পরে গল্পের বিষয় ও কাঠামো সম্পর্কে তোমার ধারণার কিছু পরিবর্তন হয়েছে। এই ধারণার উপর ভিত্তি করে ৬.২.১ পরিচ্ছেদে লেখা গল্পটি নতুন করে লেখো। তোমাদের সবার লেখা গল্পগুলো একত্রে বাঁধাই করে বইয়ের মতো বানাও। বানানো বইয়ের শিরোনাম দাও এবং তা তোমাদের স্কুলের পাঠগারে রাখো।
আরও দেখুন...